দেখুন ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা এখন পানির মত সহজ। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করার মাধ্যমে খুব সহজেই জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য পরিবর্তন করা যায়। আজকে আমরা জানবো NID Card সংশোধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে।
আমাদের দেশের অনেক মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভুল হওয়া নিয়ে অনেক সমস্যায় রয়েছে। কারো নামের বানান ভুল টাইপ হয়েছে, কারো কারো পুরো নামটাই ভুলে ভরা। আইডি কার্ডে পিতা মাতার নামের বানান ভুল উঠেছে, কিংবা ঠিকানায় হয়েছে গলদ। এমন সব সমস্যার সমাধান হলো অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করা।
কিন্তু শুধু সংশোধন আবেদন করলেই হবে না। তথ্য পরিবর্তনের পক্ষে শক্তিশালী প্রমান প্রয়োজন। ভোটার আইডি কার্ডের কোন তথ্য সংশোধন করতে কি কাগজ আপলোড করতে হয় এটা জানানোই আজকের প্রধান বিষয়।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুসারে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের মোট ৪টি ক্যাটাগরি রয়েছে। সংশোধনের ধরন অনুসারে প্রমাণপত্র বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আইডি কার্ডে নিজের নাম সংশোধন করতে এক ধরনের কাগজপত্র এবং পিতা মাতার নাম পরিবর্তন করতে অন্যরকম কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে বোর্ড পরিক্ষার সার্টিফিকেট, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে। জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য উত্তরাধিকার সনদ ও সিভিল সার্জন কর্তৃক বয়স প্রমাণের রিপোর্ট প্রয়োজন হয়। কিছু কিছু আবেদনে পিতা মাতার ও ভাই বোনের আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন হয়।
NID Card এ ব্যক্তির অনেক ইনফরমেশন থাকে। এক একটি তথ্য প্রমানে করতে এক এক ডকুমেন্ট লাগতে পারে। যেমন একজনের এনআইডি কার্ডে রক্তের গ্রুপ ভুল লিপিবদ্ধ হয়েছে। এখন এটি পরিবর্তন করতে কোন ক্লিনিক বা হাসপাতাল থেকে রক্তের গ্রুপ টেস্ট রিপোর্ট আপলোড করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য কোন ডকুমেন্ট কাজের না।
আইডি কার্ডের নাম সংশোধন করতে যা যা লাগে
নিজের নামের আংশিক ভুল সংশোধন করতে কিংবা বানান পরিবর্তনের জন্য আবেদনের সাথে যে সব কাগজ আপলোড করতে হবে তা লিস্ট আকারে দেয়া হলো-
নামের বানান সংশোধন বা আংশিক পরিবর্ত করতে
- যে কোন বোর্ড পরিক্ষার সনদ (JSC, SSC, HSC)
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পাসপোর্ট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- কাবিননামা
- সন্তানের বোর্ড পরিক্ষার সনদ
- সন্তানের NID Card
উপরের তালিকায় উল্লেখ করা কাগজের যে কোন এক বা একাধিক ডকুমেন্ট থাকলেই আপনার নামের বানান বা আংশিক পরিবর্তন আবেদন করতে পারবেন। এই ধরনের আবেদন “ক” ক্যাটাগরির মধ্যে হয়, যার আনুমোধন উপজেলা পর্যায়ে হয়ে থেকে।
নিজের মূল নাম ঠিক রেখে নামে সাথে পদবি যুক্ত করা অথবা পরিবর্তন করার জন্যও উপরের বর্ণিত ডকুমেন্টস গুলোর একটি বা দুটি আপলোড করতে হবে।
সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন করতে যা যা লাগবে
আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নাম যদি সম্পূর্ণ ভুল লিপিবদ্ধ হয় অর্থাৎ আপনার প্রকৃত নামের সাথে NID Card এর নামের কোন মিল না থাকে তা হলে সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন করতে সংশোধন আবেদনের সাথে যতোবেশি সম্ভব প্রমাণাদি আপলোড করার চেষ্টা করবেন।
এনআইডি কার্ডের সম্পূর্ণ নাম সংশোধন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভুমিকা পালন করে শিক্ষাগত যোজ্ঞতা সনদ। আপনার কোন সার্টিফিকেট থাকেলে তা সংযুক্ত করতে চেষ্টা করবেন।
- যে কোন বোর্ড পরিক্ষার সনদ (JSC, SSC, HSC)
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পাসপোর্ট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- হলফনামা
- কাবিননামা
- সন্তানের বোর্ড পরিক্ষার সনদ
- সন্তানের NID Card
- এমপিও/ সার্ভিস বইয়ের কপি
- তদন্ত প্রতিবেদন (যদি করা হয়)
- উপজেলা নির্বাচন অফিসারের প্রতিবেদন
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদনের সাথে যত ইচ্ছে তত প্রমাণাদি আপলোড করতে পারবেন। আপলোড করার জন্য কোন সংখ্যা নির্ধারণ করা নেই। তবে প্রতিটি ফাইলের সাইজ 100KB এর ছোট হতে হবে।
যদি সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তনের আবেদনে পাবলিক পরীক্ষার সনদ আপলোড করা হয় তাহলে সেই আবেদন “গ” ক্যাটাগরীর অন্তর্ভুক্ত হয়। আর যদি কোন সনদ জমা না দেয়া হয় বা যথাযথ কাগজপত্র জমা না দিতে পারেন তাহলে সে আবেদন “ঘ” ক্যাটাগরীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। “ঘ” ক্যাটাগরীর আবেদন নির্বাচন কমিশনের হেড আফিস থেকে আনুমোদন করে।
পিতা মাতার নাম সংশোধন করতে যা যা প্রয়োজন
জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা মাতার নাম দুই রকম ভাবে ভুল হতে পারে প্রথমতঃ বানানগত বা আংশিক ভুল দ্বিতীয়তঃ সম্পূর্ণ নাম ভুল। পিতা মাতার নাম সংশোধন করতে যা যা প্রয়োজন তার তালিকা দেয়া হলো
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সন
- জন্ম নিবন্ধন
- পাসপোর্ট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- পিতা/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (যার নাম ভুল হয়েছে)
- ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয়পত্র
- ভাই-বোনের পাবলিক পরীক্ষার সনদ
- বিবাহের কাবিন নামা।
আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করতে কি কি লাগে
জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখ সংশোধন করার জন্য বোর্ড পরীক্ষার সার্টিফিকেট, ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট, উত্তরাধিকার সনদ ভাই বোনের এনআইডি নাম্বার ও জন্মের ক্রম উল্লেখ করে। ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ এবং চাহিত (সংশোধিত) জন্মতারিখের পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিন্নতা রয়েছে।
- যে কোন বোর্ড পরিক্ষার সনদ (JSC, SSC, HSC)
- পাসপোর্ট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- অনলাইন জন্ম সনদ
- সকল ভাই বোনদের আইডি কার্ডের কপি
- সিভিল সার্জন কর্তৃক বয়স প্রমাণের রিপোর্ট
- চেয়ারম্যান কর্তৃক পারিবারিক সনদ (পরিবারের সকল সদস্যের নাম, পিতা-মাতা, ভাই বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং জন্মের ক্রম উল্লেখসহ
- পেনশন বা অবসর ভাতা বইয়ের সত্যায়িত ফটোকপি
- সার্ভিস বই / এমপিও শীটের কপি / চাকরীর আইডি / উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অফিস স্মারক সম্বলিত পত্র
উল্লেখিত কাগজপত্রগুলোর মধ্যে যে কাগজপত্র আপনার আছে সেগুলো আবেদনের সাথে জমা দেয়া যেতে পারে। ১ দিন থেকে ৩ বছর পর্যন্ত জন্ম তারিখ পরিবর্তনের আবেদন “ক” ক্যাটাগরীতে থেকে। যাদের জন্ম তারিখ ৩ বছর থেকে ৫ বছর গড়মিল সে আবেদনগুলো “খ” ক্যাটাগরীতে থাকে।যাদের জন্ম তারিখ ৫ থেকে ১০ বছরের গড়মিল সে আবেদনগুলোগুলো “গ” ক্যাটাগরীতে থাকে এবং যাদের জন্ম তারিখে ১০ বছরের বেশি গড়মিল রয়েছে সেগুলো “ঘ” ক্যাটাগরীতে থাকে।
NID Card এর জন্ম নিবন্ধন সনদ নাম্বার সংশোধন
আমরা অনেকে হয়তো হাতের লেখা জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকা অবস্থায় জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করেছি এবং আইডি কার্ড হয়ে গেছে।
বর্তমানে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ নাম্বার এবং হাতের লেখা জন্ম নিবন্ধন নাম্বারের সাথে মিল না থাকায় অনেকেই ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম সনদ নাম্বার পরিবর্তন করতে চায়।
জন্ম সনদ নাম্বার সংশোধন করার জন্য আবেদনের সাথে আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি আপলোড করলেই হয়ে যায়।
তাছাড়া আপনি চাইলে চেয়ারম্যান / সিটি কর্পোরেশন অথবা পৌরসভা প্রত্যয়ন পত্র আবেদনের সাথে জমা দিতে পারেন।
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- প্রত্যয়ন পত্র বা চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট
ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন যা লাগবে
আপনার ভোটার আইডি কার্ডের বর্তমান ঠিকানা অথবা স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে হলে জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন আবেদনের সাথে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, ইউটিলিটি বিলের কপি চৌকিদারী টেক্স রশিদ অথবা পৌরকর আদায়ের রশিদ আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে।
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ বিল/ গ্যাস বিল)
- টেক্স বা কর প্রদানের রশিদ
- প্রত্যয়ন পত্র
ইউটিলিটি বিলের কপি হিসেবে বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাস বিলের কাগজ ব্যবহার করতে পারেন। সিটি কর্পোরেশন অথবা পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র আবেদনের সাথে যুক্ত করে দেওয়া উত্তম।
ভোটার আইডি কার্ডে পেশা সংশোধন
আপনার পেশার সাথে আইডি কার্ড এর প্রদত্ত পেশার কোন মিল না থাকলে তা পরিবর্তন করার জন্য অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করতে পারেন। জাতীয় পরিচয় পত্রে আপনার পেশা সংশোধন বা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন হবে,
- নিয়োগপত্র স্কেন কপি
- পেশা ভিত্তিক সনদ
- সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত সনদ
আইডি কার্ডের ছবি পরিবর্তন
জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি পরিবর্তন করার জন্য অনলাইনে আবেদন করার কোন সুযোগ নেই। যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি খুবই অস্পষ্ট এবং আপনাকে চিনতে কষ্ট হয় তাহলে আপনার ভোটার আইডির ছবি পরিবর্তন করার জন্য উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আপনার এই বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন | NID Card সংশোধন করুন |
অনলাইন জন্ম নিবন্ধন | জন্ম সনদ ডাউনলোড |
শেষ কথাঃ জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তা ক্যাটেগরী ভিত্তিক আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তারপরও আপনাদের মনে কোন প্রকার প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন। আপনার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। গুরুত্বপূর্ণ কোন টপিক বাদ পড়ে গেছে এমন মনে হলে সেটি আমাদের জানাতে পারেন পরবর্তী সময়ে সেই টপিকটি আমরা এখানে যুক্ত করার চেষ্টা করবো।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর
আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করতে কি করতে হয়?
আপনার ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর, ছবি এবং আঙ্গুলের ছাপ এসকল বায়োমেট্রিক তথ্য অনলাইনে আবেদন করে পরিবর্তন করা যায়না। তারপরেও যদি আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রে স্বাক্ষর কিংবা ছবি পরিবর্তন করতে চান তাহলে আপনার স্থানীয় নির্বাচন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে?
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হয়।
এনআইডি কার্ডে পাসপোর্ট নাম্বার পরিবর্তন করতে কি কি লাগে?
পাসপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পাসপোর্ট নবায়ন করলে পাসপোর্ট নাম্বার পরিবর্তন হয়ে যায়। আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের পাসপোর্ট নাম্বার পরিবর্তন করতে চাইলে আপনার ই পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি সংশোধন আবেদন এর সাথে জমা দিতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ডে রক্তের গ্রুপ যুক্ত করতে কি ডকুমেন্ট লাগবে?
অনেকের এনআইডি কার্ড এ রক্তের গ্রুপ উল্লেখ থাকে না রক্তের গ্রুপের স্থলে ফাঁকা থাকে। জাতীয় পরিচয়পত্রে রক্তের গ্রুপ যুক্ত করতে হলে কোন মেডিকেল ক্লিনিক হতে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট ভোটার সংশোধনের আবেদন এর সাথে যুক্ত করলেই হবে।
ধন্যবাদ আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করার জন্য🙂
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 😍😍